বর্তমানে ব্লু-রে এর আধিপত্যের ফলে ৪.৭ জিবি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ডিভিডি ধীরে ধীরে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। তবে, কি ডিভিডি আবারও একটি নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে ফিরে আসতে পারে? সম্প্রতি, তিনজন চীনা বিজ্ঞানী একটি যুগান্তকারী প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেছেন যা তাত্ত্বিকভাবে একটি ডিভিডিকে ১,০০০ টেরাবাইট বা এক পেটাবাইট ডেটা সংরক্ষণ করার ক্ষমতা দিতে পারে। ব্লু-রের সঙ্গে এটি তুলনা করলে, এটি একটি বিশাল অগ্রগতি।
এই আবিষ্কারের সঠিক বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি একটি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে, তবে সাধারণ ভাষায় এর মূল কথা হলো: ডিভিডির ধারণক্ষমতা লেজার বিমের আকার দ্বারা সীমাবদ্ধ, যা ছোট গর্ত তৈরি করে ডেটার স্রোতকে প্রতিনিধিত্ব করে। ব্লু-রে এই ক্ষমতা বাড়াতে আরও ছোট নীল লেজার ব্যবহার করেছে, তবে সেই প্রযুক্তির ধারণক্ষমতাও সীমায় পৌঁছে গেছে।
১৮৭৩ সালে জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী আর্নস্ট আব্বে আবিষ্কার করেছিলেন যে একটি লেন্সের মাধ্যমে ফোকাস করা আলোর বিম তার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অর্ধেকের চেয়ে ছোট হতে পারে না। দৃশ্যমান আলো, যা ডিজিটাল মিডিয়া ডিস্কে ডেটা পুড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়, তার তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রায় ৫০০ ন্যানোমিটার। তাই এই আইন ভাঙার পরিবর্তে, গবেষকরা দুটি আলোর বিম ব্যবহার করে একটি নতুন পথ খুঁজে পেয়েছেন যা একে অপরকে বাতিল করে দেয়। এই বিমগুলো সম্পূর্ণভাবে একত্রিত না হওয়ায়, আরও ছোট একটি বিম তৈরি করা সম্ভব হয় যা ডিস্কে আরও ছোট গর্ত পুড়াতে সক্ষম, এবং এতে তার ধারণক্ষমতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।
তবে এই প্রযুক্তি ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর আগে অনেক কিছুই পরিপূর্ণ করতে হবে। যেমন, এই ক্ষুদ্র গর্তগুলোতে পুড়ানো ডেটা কীভাবে পাঠ করা যাবে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এবং ১০০০ টেরাবাইট ডেটা পুড়াতে যে সময় লাগবে তা অনেক বেশি, তাই ডিস্ক পুড়ানোর আরও দ্রুত উপায়ও তৈরি করতে হবে। তবে, ডিভিডি এবং ব্লু-রের স্টোরেজ ক্ষমতায় একটি বিশাল পরিবর্তনের সম্ভাবনা এখনও অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ।
প্রশ্নোত্তর (FAQ)
প্রশ্ন ১: ডিভিডির ধারণক্ষমতা কীভাবে বৃদ্ধি করা হচ্ছে?
উত্তর: বর্তমানে ডিভিডির ধারণক্ষমতা লেজার বিমের আকার দ্বারা সীমাবদ্ধ। নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে দুটি আলোর বিম ব্যবহার করে আরও ছোট একটি বিম তৈরি করা হয়েছে যা ডিস্কে আরও ছোট গর্ত তৈরি করতে পারে, ফলে ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
প্রশ্ন ২: ব্লু-রে প্রযুক্তি কেন সীমিত হয়েছে?
উত্তর: ব্লু-রে প্রযুক্তি ছোট নীল লেজার ব্যবহার করে ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে, তবে এই প্রযুক্তিরও একটি সীমা রয়েছে। বর্তমান ব্লু-রে প্রযুক্তির ধারণক্ষমতা একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যা আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়নি।
প্রশ্ন ৩: নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে ডেটা লেখা ও পড়ার প্রক্রিয়া কীভাবে হবে?
উত্তর: নতুন প্রযুক্তি অনুযায়ী, ছোট গর্তের মাধ্যমে ডেটা লেখা সম্ভব হলেও, এই ক্ষুদ্র গর্তগুলির ডেটা পড়ার প্রক্রিয়া এখনও পরিপূর্ণ হয়নি। এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ, এবং গবেষণা চলছে কিভাবে এই ক্ষুদ্র গর্তগুলোতে ডেটা পড়া যাবে।
প্রশ্ন ৪: ১০০০ টেরাবাইট ডেটা লেখা কত সময় নিবে?
উত্তর: বর্তমানে, ১০০০ টেরাবাইট ডেটা লেখা একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াটিকে দ্রুততর করা জরুরি, যাতে ব্যবহারকারীরা দ্রুত ডেটা লেখা এবং পড়তে সক্ষম হন।
প্রশ্ন ৫: এই প্রযুক্তি কখন বাজারে আসবে?
উত্তর: নতুন প্রযুক্তির পূর্ণাঙ্গ বিকাশ এবং পরীক্ষার পরই এটি বাজারে আসবে। অনেক কিছুই এখনও পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে, যেমন ক্ষুদ্র গর্তগুলির ডেটা পড়ার প্রক্রিয়া এবং দ্রুত লেখার পদ্ধতি।
প্রশ্ন ৬: এই প্রযুক্তি ডিভিডি ও ব্লু-রের ভবিষ্যতকে কীভাবে প্রভাবিত করবে?
উত্তর: নতুন প্রযুক্তি যদি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে এটি ডিভিডি ও ব্লু-রের ধারণক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে। এটি বাজারে নতুন সুযোগ এবং পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে, যা তথ্য সংরক্ষণ ও বিতরণের ক্ষেত্রে একটি বিপ্লব ঘটাতে পারে।
এই নতুন প্রযুক্তির সম্ভাবনা আমাদের ডিজিটাল মিডিয়ার ভবিষ্যতকে নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে বাধ্য করছে। এখনই জানিয়ে রাখা দরকার যে, বাজারে আসতে এখনও অনেক সময় লাগবে এবং প্রযুক্তির চূড়ান্ত বাস্তবায়ন পর্যন্ত গবেষণা ও উন্নয়ন চলবে।